সুমন করাতি, হুগলি: বাঙালির হেঁসেলে ইদানিং অসময়ের আনাজের চাহিদা বাড়ছে। শীতকালে পটল কিংবা গ্রীষ্মে ফুলকপির স্বাদ নিয়ে আগ্রহী অনেকেই। এসব সবজির বেশিরভাগই আসে ভিনরাজ্য থেকে। অসময়ের সবজি এবং বিদেশি আনাজের কথা মাথায় রেখে আধুনিক চারা তৈরির উৎকর্ষ কেন্দ্র রয়েছে জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের চুঁচুড়া ফার্ম এলাকায়। চলতি মরশুমের গোড়া থেকে চাষিদের জন্য অসময়ে আনাজের চারা তৈরি শুরু হয়েছে এখানে। আর তা থেকে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
হুগলি জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে ১৬ একর জমিতে উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি পলি হাউস রয়েছে সেখানে। তার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু হাইটেক পলি হাউস যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ চাষের পদ্ধতি ও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর। অসময়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো-সহ বিভিন্ন আনাজের চারা তৈরি করা কৃষকদের পক্ষে কঠিন হয়। সে কথা মাথায় রেখেই এখন ভিন্ন প্রযুক্তিতে হচ্ছে চারা তৈরির কাজ। প্লাস্টিকের তৈরি ট্রেতে মাটি ছাড়াই নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়োর সঙ্গে কেঁচো সার ও জৈব জীবাণুনাশক মিশিয়ে আনাচে চারা তৈরি করা হচ্ছে এখানে। দেশীয় এবং ইজরায়েল প্রযুক্তির মেলবন্ধনে কাজ চলছে এখানে।
[আরও পড়ুন: বকেয়া ইস্যুতে সরাসরি বৈঠক হোক মোদি-মমতার, সুদীপকে পরামর্শ গিরিরাজের]
সাধারণত মাটিতে চারা তৈরিতে মাসখানেক সময় লেগে যায় তার পরেও চারা তুলতে গিয়ে কোনও কোনও সময়ে শিকর ছিঁড়ে যায় আবার বেশিরভাগ সময় রোগ পোকার আক্রমণ বাড়ে। এই আধুনিক পদ্ধতিতে পুষ্ট চারা ২০-২২ দিনের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব।
চারা তৈরির দায়িত্বে থাকা জেলা-সহ উদ্যানপালন অধিকারীর শুভদীপ নাথ জানান, এখানে ইজরায়েলের প্রযুক্তি অবলম্বন করে ও আর্থিক সহযোগিতায় হাইটেক গ্রিন হাউজ পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে পুরো ঘরটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ও জল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বুমারের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে তাই চারা ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এবং এখানে কনিক্যাল প্লাটট্রেতে চারা তৈরি করা হচ্ছে তাই যারা রোগ পোকার ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে ফসলে কোনওরকম মাটি বাহিত রোগ দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে চাষিদের সময়ে উন্নত মানের চারা দেওয়ার ব্যবস্থা চলছে । জেলার কৃষি উৎপাদক সংস্থাগুলি সঙ্গে যোগাযোগের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে বাইরে থেকে ফসলের আমদানি কমিয়ে রাজ্যের মধ্যেই তা উৎপাদন করা যায়।
[আরও পড়ুন: ফের রংমিলান্তি! কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শোভন-বৈশাখী]
হরিপালের এক কৃষক জানান, ”এর আগে বহুবার এখান থেকে চারা নিয়ে গিয়েছি, এখানকার চারা অন্তত সাত থেকে আট দিন আগে তৈরি হয়ে যায়। তাই বিক্রি তো করার জন্য দু পয়সা বেশি দাম পাই। বারো মাসে এখানে সব ধরনের চারা পাওয়া যায়, তাই অসময়ে সবজি বিক্রি করে দু পয়সার মুখ দেখতে পাই।”
Source: Sangbad Pratidin