সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় থেকে হাত শিবিরকে উপড়ে দিয়ে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠান- জয়ের হ্যাটট্রিক করে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের শঙ্খ বাজিয়ে দিল বিজেপি। একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষাকে কার্যত মিথ্যে প্রমাণ করে গেরুয়া ঝড় উঠল তিন রাজ্যে। কিন্তু এহেন বিরাট জয়ে কোন সমীকরণ কাজ করল? দুর্নীতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে নিজেদের মতো ব্যবহার করার অভিযোগে বারবার সরব হয়েছে বিরোধীরা। তা সত্ত্বেও কোন স্ট্র্যাটেজিতে তিন রাজ্যেই ফুটল পদ্ম? পাঁচটি কারণ খোঁজা চেষ্টা করা হল এই প্রতিবেদনে।
১. মোদি ম্যাজিক: সবচেয়ে বড় তথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ মোদি ম্যাজিক। নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতিতে যে এখনও আশ্বস্ত হয় জনতা, তাঁর মন্তব্যে যে এখনও আস্থা হারায়নি সাধারণ মানুষ, এই জয় যেন তারই প্রমাণ। কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের পর বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছিলেন, ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে মোদি ম্যাজিক। কিন্তু সেসব দাবিকে সোজা মাঠের বাইরে নিয়ে গিয়ে ফেললেন নমো। উলটে সদম্ভে জানিয়ে দিলেন, এই জয়ই চব্বিশে হ্যাটট্রিকের গ্যারান্টি দিচ্ছে। অর্থাৎ লোকসভাতেও যে মোদি ফ্যাক্টরই বিজেপির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, তা বলাই বাহুল্য।
২. মহিলা ভোটার: বিজেপির জয়ের আরেকটি কারণ নিঃসন্দেহে মহিলাদের বিশ্বাস জয় করা। কীভাবে? এক্ষেত্রে খয়রাতির রাজনীতিই ছিল গেরুয়া শিবিরের হাতিয়ার। মহিলাদের জন্য নানা ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষমতায় এলে অনুদানের অঙ্ক আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। যে প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে পদ্মশিবিরকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছে সাধারণ মানুষ। তাই মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও মহিলাদের হাত ধরে বৈতরণী পার করেছে বিজেপি।
৩. বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি: বিজেপির জয়ের অন্যতম বড় কারণ তাদের সাংগঠনিক শক্তি। মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, এই নিয়ে নেতাদের মধ্যে যতই দড়ি টানাটানি হোক না কেন, নিজেদের আসল লক্ষ্য থেকে কখনওই সরে দাঁড়াননি কেউ। আর তা হল ক্ষমতা দখল। সেই বার্তা সফলভাবে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের কাছেও পৌঁছে দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় কোন্দল ঢাকতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অমিত শাহ। তাই নির্বাচনী প্রচারে অন্তর্কলহ ভুলে একযোগে লড়াই করেছেন নেতারা।
[আরও পড়ুন: ধুতি পরা যুবককে ঢুকতে বাধা বিরাট কোহলির রেস্তরাঁয়! তুঙ্গে বিতর্ক]
৪. কংগ্রেসের অন্তর্কলহের সুযোগকে ব্যবহার: রাজস্থানের মতো রাজ্যে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে কংগ্রেসের অন্তর্কলহের ছবিটা। শচীন পাইলটের মতো নেতা একটা সময় কংগ্রেসের হাত ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন। প্রকাশ্য়ে এসে যায় দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। আবার রাহুল গান্ধীর মতো নেতাও ভুগছিলেন আত্মতুষ্টিতে। ময়দানে না নেমেই বলে দিয়েছিলেন, ‘মধ্যপ্রদেশ আমরা জিতছিই।’ ক্ষমতায় ফিরছেন ধরে নিয়ে লড়াই করার চেষ্টা করেননি ভুপেশ বাঘেলের মতো মুখ্যমন্ত্রীও। উলটে সেখানে টিএস সিং দেওর সঙ্গে তাঁর অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। যেখানে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব লাগাতার প্রচার চালিয়ে গিয়েছে, সেখানে একেবারেই ফিকে দেখিয়েছে হাত শিবিরকে।
৫. হিন্দুত্ব তাস: হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান। গোবলয় জয়ের নেপথ্যে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে এই মন্ত্রও। দক্ষিণ ভারতে যেখানে বিজেপি বিরুদ্ধ মানসিকতা চোখে পড়ে, সেখানে উত্তর ভারতের ছবিটা অনেকটাই আলাদা। উত্তরপ্রদেশ এর আগে হিন্দুত্বের তাস খেলে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে বিজেপি। এবারও নিজেদের পুরনো স্ট্র্যাটেজিতে শান দিয়েই বাজিমাত গেরুয়া শিবিরের।
Source: Sangbad Pratidin