সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ”আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন বড় বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা এভাবে গুলি চালাচ্ছে। আমরা ওর কী ক্ষতি করেছি?” একথা বলার সময় আজও চোখেমুখে আশ্চর্য একটা হতভম্ব ভাব কাজ করতে থাকে দেবিকার। দেবিকা রোটাওয়ান। ২০০৮ সালের অভিশপ্ত ২৬ নভেম্বর (26/11) তাঁর বয়স ছিল ৯ বছর। আজ তিনি বছর চব্বিশের যুবতী। কিন্তু এত বছরেও কাটেনি ট্রমা। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলার সময় দেবিকা বলেন, ”আজও আমার ক্ষত আসলে দগদগেই রয়ে গিয়েছে। সারেনি।”
আজ থেকে দেড় দশক আগে গোটা ভারত, বলা যায় গোটা বিশ্ব চমকে উঠেছিল মুম্বইয়ের জঙ্গি হামলার (Mumbai attcak) ঘটনায়। কাসভ ও তার সঙ্গীরা নির্বিচারে যে হত্যালীলা চালিয়েছিল, সেই নারকীয় ও ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষত আজও বুঝি দগদগে বাণিজ্যনগরীতে। দেবিকা রোটাওয়ানের কথায় আসা যাক। মা, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে পুণে যাচ্ছিল ৯ বছরের বালিকা। পরবর্তী সময়ে সেই ছিল এই মামলার কনিষ্ঠতম সাক্ষী। সেদিন দেবিকা তাঁর পরিবারের সঙ্গে সিএসটি স্টেশনে উপস্থিত হলে আচমকাই বোমা ছোড়ে জঙ্গিরা। শুরু হয় গুলি চালানো। দেবিকার কথায়, ”আমি দেখছিলাম একটা লোক, তার হাতে বড় বন্দুক। লাগাতার গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। আশপাশে বহু মানুষ বিপন্ন। কারও হাত, কারও পেট রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমারও গুলি লেগেছিল পেটে। পরে হাসপাতালে ছবার অপারেশন হয়েছিল আমার। বের করা হয়েছিল বুলেট।” সময় পেরিয়ে গিয়েছে। শরীরের ক্ষত শুকিয়ে গিয়েছে কবে। কিন্তু মনের ভিতরটা একই রকম দগদগে হয়ে রয়েছে। আজও দেবিকা বুঝতে পারেননি, তিনি ওই লোকগুলোর কী ক্ষতি করেছিলেন!
[আরও পড়ুন: লজ্জায় মুখ ঢাকছে বাণিজ্য নগরী! মুম্বইয়ে দশ বছরে ধর্ষণ বেড়েছে ১৩০ শতাংশ]
যেমন ভুলতে পারেন না করুণা ঠাকুর ওয়াঘেলা। কাসভের বুলেট কেড়েছিল স্বামীর প্রাণ। অথচ তিনি কাসভের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জলে ভরা গ্লাস। আজও সেই স্মৃতি, বলা যায় দুঃস্মৃতির কথা বলতে গিয়ে ঘৃণায় ভরে ওঠে তাঁর কণ্ঠস্বর, ”কাসভের নামটা নিতে গেলেই ঘেন্না হয়। আমার স্বামী ও চার বছরের ছেলে ঘরে ছিল। ওরা খাচ্ছিল। সেই সময় কাসভ এসে দরজায় ধাক্কা দেয়। ও জল চাইলে আমার স্বামী গ্লাস এগিয়ে দেয়। জল খেয়ে গ্লাস ফেরত দেয় কাসভ। সেটা রাখতে পিছনে ফিরতেই ওকে গুলি করে খুন করে দেয়… আমার ছেলের দিকেও বন্দুক তুলেছিল। ও শৌচাগারে গিয়ে লুকিয়ে পড়েছিল।”
সময় পেরিয়েছে। আজও সেদিনের হামলাকে ভুলতে পারেননি অসংখ্য মানুষ। যাঁরা স্বজনহারা তাঁদের আপনজনেরা কিংবা যাঁরা আক্রান্ত হয়েও কোনওমতে বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁদের সকলের সামনে পুনরাবৃত্ত হতে থাকে সেই নারকীয় হত্যালীলা। রক্ত ও আর্তনাদের দগদগে স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াতে হয় তাঁদের সকলকে। বয়ে বেড়ান আরও কোটি কোটি ভারতীয়ও। যাঁরা টিভির পর্দায় দেখেছেন কিংবা কাগজে পড়েছেন ২৬/১১ সম্পর্কে। সম্পূর্ণ অপরিচিত আততায়ীরা যে কোনও সময় তাঁদেরও মৃত্যুর মুখে ছুড়ে ফেলবেন কিনা সেই সংশয় সেই থেকে সকলেরই মনের ভিতরে জেগে রয়েছে। আজও অধরা মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ডরা। একই ভাবে আজও খোলা হাওয়ায় হু হু করে ছড়িয়ে রয়েছে ঘিনঘিনে সন্ত্রাসবাদের আতঙ্ক। প্রতিটি ২৬/১১ সেই আতঙ্ককে আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে যায় যেন। শেষপর্যন্ত কবে সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলা যাবে সেই স্বপ্ন আজও দেখে চলেছেন সারা বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা।
[আরও পড়ুন: ওড়িশা থেকে উদ্ধার বাংলার নিখোঁজ কলেজ ছাত্রের দেহ, সন্তানহারা আরামবাগের পরিবার]
Source: Sangbad Pratidin