বোরিয়া মজুমদার: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ভবিষ্যৎ থেকে ভারতীয় কোচের পদে রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা, গত কয়েকদিনে ভারতীয় ক্রিকেটর এই ত্রিমূর্তিকে নিয়ে শব্দ খরচ হয়েছে বিস্তর। অনেকেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রোহিত বা বিরাটের ভবিষ্যৎ দেখছেন না। সে’সব দাবি আদৌ যুক্তিগ্রাহ্য? খতিয়ে দেখল ‘সংবাদ প্রতিদিন’।
রোহিত শর্মা: যে ব্র্যান্ড অফ ক্রিকেট গোটা বিশ্বকাপে রোহিত উপহার দিয়েছেন, সেটা এককথায় অতুলনীয়। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে অভ্যস্ত হলেও এমন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে আগে কখনও দেখা যায়নি হিটম্যানকে। এমনকী এই ব্যাটিং ঘরানা গতবছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দেখতে পাওয়া যায়নি ভারতীয় দলের কাছ থেকে। পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে ছয় মাস মাত্র বাকি। ফলে সেই মঞ্চে একই ধরনের ব্যাটিং করা রোহিতের পক্ষে মোটেই কষ্টসাধ্য নয়। এবং রোহিত সেই ভূমিকা উপভোগও করবেন। বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে নিজেকে আরও ভালোভাবে তৈরি করে নিতে পারবেন হিটম্যান। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রোহিতের সামনে আরও একটা সুযোগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নকে সার্থক করার। তাই সবদিক থেকেই রোহিতকে ভারতের দরকার। আরও বিশেষ করে তাঁকে দরকার আইসিসি-র। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে রোহিত, বিরাট কোহলির মতো মুখ না থাকলে অচিরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তার জৌলুস হারাবে। ফলে ‘ব্র্যান্ড রোহিত’-কে আইসিসির দরকার। বিসিসিআইয়েরও তৎপর হওয়া দরকার রোহিতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলানোর ব্যাপারে। আর রোহিতের দিক থেকে যদি বিচার করা হয়, তাহলে টি-টোয়েন্টি নয়, এই মুহূর্তে ওয়ান ডে ফরম্যাট থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়া দরকার হিটম্যানের। বাস্তব হল, ওয়ান ডে-তে আর নতুন কোনও ভবিষ্যৎ নেই ৩৬ বছরের রোহিতের। সেদিক থেকে টি-টোয়েন্টি হিটম্যানের জন্য ‘বেস্ট অপশন’।
[আরও পড়ুন: রাতভর বন্ধ থাকার পর ফের শুরুর মুখে উদ্ধারকাজ, আজই কি মুক্তি উত্তরকাশীর শ্রমিকদের?]
বিরাট কোহলি: বিশ্বক্রিকেটের ‘ফিটেস্ট’ প্লেয়ার কে? একবাক্যে সবাই বলবেন, বিরাট কোহলি। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে বিরাট ভারতীয় দলে ‘অটোমেটিক চয়েস’। বিশ্বকাপে ৯৫ ব্যাটিং গড়ে রেকর্ড ৭৬৫ রান করেছেন, সেরা ফর্মে বিরাজ করছেন কোহলি। এই ফর্ম ও ফিটনেসকে মাথায় রেখেও যদি তাঁকে ছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্লু-প্রিন্ট সাজানো হয়, সেটা হবে সবচেয়ে বড় ভুল। প্রয়োজনে কোহলিকে দ্বিপাক্ষিক ওয়ান ডে সিরিজ থেকে বিশ্রাম দেওয়া হোক। অন্তত আগামী দু’বছরের জন্য। ’২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে যুক্ত হবে ক্রিকেট। বিরাটকে সামনে রেখে তার পরিকল্পনা সাজানো উচিত। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতীয় দলের কোহলিকে প্রয়োজন। নিজের পুরনো ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন ‘চেজমাস্টার’। তাহলে মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে যেখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সেখানে খেলার স্বপ্ন কেন বিসর্জন দেবেন কোহলি! বিসিসিআই? তারাই বা রাজি হবে নাকি, দলের সেরা পারফর্মারকে বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টির পরিকল্পনা সাজাতে? মনে হয় না। সর্বোপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিরাটহীন বিশ্বকাপ কল্পনাতীত ব্যাপার। কোহলি ক্রিকেটের সেরা ব্র্যান্ড। তাঁকে ছাড়া বিশ্বকাপের কথা এই মুহূর্তে চিন্তা করা দুষ্কর আইসিসির পক্ষে।
রাহুল দ্রাবিড়: বিশ্বকাপ তাঁর কাছে ‘অধরা মাধুরী’। সেই বিশ্বকাপ জিতে ভারতের হেড কোচের দায়িত্ব ছাড়াটা অনেক সহজসাধ্য ছিল রাহুল দ্রাবিড়ের জন্য। ফাইনালে একটা বিশ্রী হার সেই স্বপ্ন হরণ করেছে কোচ দ্রাবিড়ের কাছ থেকে। অতঃপর? ছেলে বড় হচ্ছে, পরিবারকেও সময় দেওয়া দরকার। তাই ভিভিএস লক্ষ্ণণের হাতে দায়িত্বভার তুলে দিয়ে ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন দ্রাবিড়। সেটাই এই মুহূর্তে সহজ পথ ‘মিস্টার ডিপেন্ডবলে’র জন্য। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে কোনও কাজ অসমাপ্ত রেখে যাওয়া ‘দ্রাবিড়োচিত’ নয়। চ্যালেঞ্জ যতই কঠিন হোক না কেন, কঠোর পরিশ্রমে তা জয় করাই দ্রাবিড়ীয় অধ্যাবসায়ের প্রথম ও প্রধান শর্ত। যা কি না এখনও আমরা দেখতে পাইনি রাহুল-জামানায়। ’০৭-র বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের দুঃস্বপ্ন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় ক্রিকেটার, অধিনায়ক রাহুলকে। কোচ হিসাবে সেই আক্ষেপের অধ্যায়ে যোগ হয়েছে সদ্য সমাপ্ত ’২৩ বিশ্বকাপ। আগামী ছয় মাসের মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কোচ রাহুল নিজেকে আর একটা সুযোগ দেবেন না? দেওয়া তো উচিত। ভারতীয় দলের নার্ভ তার চেয়ে ভালো আর কে বোঝেন। দায়িত্ব ছাড়লেও ছয় মাসের মধ্যে কতটা আয়ত্ত করা সম্ভব লক্ষ্মণ কিংবা অন্য কারও পক্ষে? দিনের শেষে দ্রাবিড়ের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত। বরাবরের মতো ভারতীয় দলের স্বার্থ উপযোগী হোক, সেটাই দ্রাবিড়ের মতো আদর্শ ‘টিমম্যানে’র কাছ থেকে কাম্য। বাকিটা, সে না হয় সময়ই বলবে।
[আরও পড়ুন: ‘ভারতের অসহযোগিতা’, পাকাপাকিভাবে বন্ধ দিল্লির আফগান দূতাবাস]
Source: Sangbad Pratidin