সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক কথায় অবিশ্বাস্য। এমন স্ক্রিপ্ট লিখতে ভয় পাবে বলিউডও। স্বামী মৃত্যুর পর কাজ শুরু করেছিলেন সাফাই কর্মী হিসেবে। তিনি এখন স্টেট ব্যাংকের একটি ব্রাঞ্চের অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার। মুম্বইয়ের প্রতিক্ষা টন্ডওয়ালকারের কঠিন লড়াই ও অবাক করা সাফল্যকে কোনওভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। তাঁকে শুধু কুর্নিশ জানানো যায়।
১৬ বছর বয়সে দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায় প্রতীক্ষার। বন্ধ হয় পড়াশুনো। স্বামী সদাশিব কুডু এসবিআইয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন। বিয়ের চার বছর পর একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর এসবিআইয়ের নিয়মে ওই ব্যাংকে সাফাইকর্মীর চাকরি পান প্রতীক্ষা। চাকরি নিতেই হত, কারণ ততদিনে এক পুত্র সন্তানের মা তিনি। তবে ছোটবেলা থেকে বই পড়তে ভালবাসতেন। তাছাড়া বিপদের সময় সকলে না হলেও অনেকে পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেই কারণে একের পর এক হার্ডেল ডিঙোতে পেরেছিলেন, জানান প্রতিক্ষা।
স্বামীর ব্যাংকের কর্মীরা সাহায্য করেন প্রতীক্ষাকে। ফলে দু’বেলা সাফাইকর্মীর কাজ করতেন আর বাকি সময় দশম শ্রেণির পরীক্ষার জন্য পড়াশুনো। ছেলে কোলে। বই কেনার পয়সা ছিল না, আত্মীয়দের থেকে বই সংগ্রহ করেন। শেষ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর নাইট কলেজে ভরতি হন। এই সময় পয়সা বাঁচানোর জন্য এক স্টপ আগে বাস থেকে নেমে পড়তেন। ক্লাস টুয়েলভ পাশ করার পর সাফাই কর্মী থেকে ক্লার্কের পদ পান উত্তীর্ণ হন প্রতিক্ষা।অর্থকষ্ট দূর হয়। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ তখনও অব্যহত।
[আরও পড়ুন: একশোয় ১৫১, পাশ করলেন শূন্য পেয়েও! বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশিট দেখে অবাক নেটদুনিয়া]
১৯৯৫ সালে মুম্বইয়ের ভিখরোলি কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক হন প্রতিক্ষা। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। ব্যাংককর্মী প্রমোদ টন্ডওয়ালকারের সঙ্গে সাতা পাকে বাঁধা পড়েন। প্রতীক্ষা জানিয়েছেন, প্রমোদের উৎসাহেই এত উপরে উঠে আসা। এবং আজ মুম্বইয়ে স্টেট ব্যাংকের একটি ব্রাঞ্চের এজিএম। ২০২০ সালের জুন মাসে এই পদে পান তিনি। প্রতিক্ষা ও প্রমোদের দুই সন্তান রয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে তিন সন্তানের মা প্রতীক্ষা। তারা বড় হয়েছে। ৫৭ বছরের প্রতিক্ষা আজ সব দিক থেকেই সফল।
[আরও পড়ুন: জ্ঞানবাপী মামলায় মুসলিম পক্ষের উকিল প্রয়াত, শোকপ্রকাশ মসজিদ কমিটির়়]
জীবনের এই কঠিন লড়াইকে অবিশ্বাস্য বোধ হয় খোদ প্রতীক্ষার। বলেন, “যখন ফিরে তাকাই, মনে হয় অসম্ভব। কিন্তু আমি এটা পেরেছি ভেবে আনন্দ হয়।” ছলছল চোখে বলেন, “যিনি বিষাদগ্রস্ত, আমার জীবনের কথা শুনলে হয়তো হবে অনুপ্রাণিত হতে পারবেন তিনি।”
Source: Sangbad Pratidin