বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: কথায় আছে, রাখে হরি তো মারে কে! মাত্র ৫ হাজার টাকা মাসিক উপার্জনে সংসার চালাতে যার কালঘাম ছুটত, রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেলেন রানাঘাটের (Ranaghat) সেই যুবকই। আনন্দে আত্মহারা গোটা পরিবার।
নদিয়ার রানাঘাট থানার পায়রাডাঙ্গার উকিলনাড়ার বাসিন্দা জগন্নাথ মণ্ডল। পায়রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের অস্থায়ী ভিলেজ রিসোর্স পার্সন হিসাবে চাকরি করে মাসে পেতেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। সেই টাকায় সংসার চালিয়ে লটারি কাটার মত অভ্যেস তার কোনওদিনই ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে কেউ জোর করলে টিকিট কিনতেন। সেটা মূলত বিক্রেতাকে সাহায্য করার মানসিকতা নিয়েই। বুধবার দুপুরে পায়রাডাঙ্গা গ্রামের একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন জগন্নাথ। বেশ কয়েকদিন ধরে একটি ছেলে টিকিট কেনার জন্য আবদার করছিলেন। তবে পকেটে খুব বেশি টাকা ছিল না জগন্নাথ মণ্ডলের। তবে শেষমেশ লটারি কিনে ফেলেন তিনি।
[আরও পড়ুন: বুলেটবিদ্ধ শরীরেও লড়েছিলেন পুলওয়ামায়, প্রাপ্য আদায়ে হাই কোর্টে নবদ্বীপের জওয়ান]
কিন্তু সেই লটারি বাঁধবে, এটা জগন্নাথ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। কিন্তু ঘটে গেল ‘ভানু পেল লটারি’ বিখ্যাত বাংলা সিনেমার মত ঘটনা। বুধবার বিকালে খেলার রেজাল্ট বেরনোর পরই জগন্নাথ জানতে পারেন প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন তিনিই। তাও আবার দু-এক লক্ষ টাকা নয়, এক কোটি টাকা। খবরটা শোনার পর হাসবেন না কাঁদবেন, বুঝেই উঠতে পারছিলেন না জগন্নাথ। দেরি না করে তিনি ছুটে পৌঁছে যান বাড়িতে। খবরটি জানান স্ত্রী মিতালি মণ্ডলকে। স্বামীর অবস্থা দেখে মিতালি আরও বেশি হতবাক হন। পরে অবশ্য স্বামী-স্ত্রী দুজনের চোখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে জল। কিছুক্ষণের মধ্যেই জগন্নাথ সিদ্ধান্ত নেন, টাকা হাতে পেয়ে প্রথম টাকা দিয়েই তিনি বাড়ির পাশে সর্বজনীন কালী মন্দিরটি সংস্কার করে বড় করে তুলবেন। সেইসঙ্গে আরও কিছু টাকা সামাজিক কাজেও ব্যয় করবেন।
মণ্ডল দম্পতির আরেকটি ইচ্ছে, দুই ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করা। জগন্নাথবাবুর যদিও নিজের জন্য কোনও সুপ্ত ইচ্ছা নেই। জগন্নাথের কোটিপতি হওয়ার খবর পেয়ে যুবকের বাড়িতে জড়ো হন প্রতিবেশীরা। সকলেই চেয়েছিলেন একবার জগন্নাথবাবুকে দেখতে। জগন্নাথ মণ্ডল জানিয়েছেন, “লটারি কেনার অভ্যাস আমার ছিল না। মাসে একবার ওই ছেলেটি এলে আমি ৩০ টাকার টিকিট কাটতাম। বুধবারেও কেটেছিলাম, তবে সেটা বাধবে ভাবিনি। মিতালীদেবী বলেন, “ভাগ্যদেবতা আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। তবে আমরা কোটি টাকার মালিক হব, এতটা কোনওদিনই ভাবিনি।”
Source: Sangbad Pratidin