সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাত্র ১০ মাস বয়সেই এক পাক নাবালিকার জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার। ওই বয়সেই ভয়ংকর পথ দুর্ঘটনায় তার ঘাড় বেঁকে যায় ৯০ ডিগ্রি। তারপর কেটে গিয়েছে ১২ বছর। আর পাঁচটা বাচ্চার মতো স্কুল যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, কোনওটাই হয়নি তার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে যন্ত্রণা নিয়ে এতগুলো দিন কাটাতে হয়েছে ছোট্ট আফসিনকে।
পাকিস্তানের(Pakistan) সিন্ধ অঞ্চলের বাসিন্দা এই ছোট্ট আফসিন। মাত্র ১০ মাস বয়সেই এক পথ দুর্ঘটনায় দিদির কোল থেকে ছিটকে পড়ে যায় আফসিন। চোট লাগে ঘাড়ে। এমনকী ঘাড় বেঁকে যায় প্রায় ৯০ ডিগ্রি। চিকিৎসার পরেও লাভ হয়নি কোনও। উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে যন্ত্রণা। একইসঙ্গে ধরা পরে আরও একটি বিরল রোগ। ডাক্তারি ভাষায় যার নাম সেরিব্রাল পালসি(Cerebral palsy)। বিরল এই রোগের চিকিৎসার খরচও যথেষ্ট বেশি। যা বহন করার মতো সামর্থ্য ছিলনা আফসিনের পরিবারের। দীর্ঘ বারো বছর এভাবেই দু’টি রোগ শরীরে বয়ে নিয়ে চলে আফসিন। তারপরই ঘটে এক আশ্চর্য ঘটনা।
[আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের ‘উপহার’, জীবনদায়ী ওষুধের দাম কমানোর ভাবনা কেন্দ্রের]
গত বছর মার্চ মাসে সীমান্তে এসে পৌঁছন ভারতীয় চিকিৎসক রাজাগোপালন কৃষ্ণণ (Rajagopalan Krishnan)। সেখানেই তিনি আফসিনকে দেখেন। তারপরে বিনা পয়সায় আফসিনের চিকিৎসার ভার নিতে চান এই দয়ালু ডাক্তার। সেই মতো দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে(Apollo Hospital) ব্যবস্থা করা হয় অস্ত্রোপাচারের। সম্পূর্ণ ভাবে সফলও হয় আফসিনের ঘাড়ের অস্ত্রোপাচার। অত্যন্ত খুশি হয়ে হয়ে চিকিৎসক জানান এমন অস্ত্রোপাচার বোধহয় পৃথিবীতে প্রথম করা হল। গত বছর আফসিনের চিকিৎসা করতে ভারতে আসে তার পরিবার। একটি অনলাইন ফান্ড সংগ্রহকারী দল তাদের যাতায়াতের সমস্ত খরচ বহন করে।
[আরও পড়ুন: দুর্গাপুরে সংশোধনাগারের পাঁচিল টপকে পলাতক ৩ আসামী, চাঞ্চল্য পুলিশ মহলে]
সুস্থ আফসিনকে দেখে ভীষণ খুশি পরিবারের সকলেই। তার দাদা ইয়াকুব কুম্বারের বক্তব্যে ফুটে ওঠে সেই সুর। তিনি জানান, “আমি ও আমার পরিবার ডাক্তারের কাছে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। অপারেশন চলাকালীন আফসিনের হৃৎপিণ্ড প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। প্রায় ৬ ঘণ্টা লাগে অপারেশন শেষ হতে। ঘাড় ও গলা মিলিয়ে মোট চার জায়গায় অপারেশন করতে হয়। কিন্তু মেডিক্যাল টিমের পারদর্শিতায় এই কঠিন যুদ্ধে জয় হয়।” ডাক্তার রাজাগোপালন যদিও জানিয়েছেন এখনও নিয়মিত চেক আপ চালিয়ে যেতে হবে আফসিনকে। দূরত্বের কারণে তিনি ভিডিও কলের মাধ্যমেই প্রতি সপ্তাহে খোঁজ রাখেন এই ছোট্ট মেয়েটির। তবু দীর্ঘ জীবন যন্ত্রণার থেকে মুক্তি পাওয়া কতটা স্বস্তির তা জানান দেয় আফসিনের মুখের হাসি।
Source: Sangbad Pratidin