অর্ণব আইচ: ডামি হয়ে পরীক্ষা দিলেই হাতে ৪০ হাজার টাকা। সঙ্গে কলকাতায় খাওয়া, থাকা, ঘোরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের একটি কোচিং সেন্টারের এই টোপে পা দিয়েই কলকাতায় অন্য পরীক্ষার্থীর হয়ে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছিল দুই তরুণী। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কলকাতার নিউ মার্কেট, দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ ও ভবানীপুরের একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে থেকে ওই তরুণী-সহ ৯ জন ডামি পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের জেরা করে পুলিশের হাতে উঠে এসেছে ডামি পরীক্ষার্থী চক্রের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন এজেন্টের নাম।
পুলিশ জানিয়েছে, নিউ মার্কেট এলাকার পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ধৃত রুবি কুমারী ও পুনম কুমারীকে জেরা করে জানা গিয়েছে, তাঁরা আসলে ঝাড়খণ্ডের কোডারমার বাসিন্দা। অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের ওই দুই তরুণী কোডারমা থেকে হাজারিবাগে আসেন। হাজারিবাগের কলেজে ভর্তি হন তারা। রুবি অঙ্কে অনার্স ও পুনম অর্থনীতিতে অনার্স। তাঁরা এখানে মেসে থেকে চাকরির জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা দিতেন। নিজেরা টিউশনিও করতেন। আবার চাকরির পরীক্ষায় পাশ করার জন্য তারা কোচিংয়েও পড়তে যেতেন। দুই তরুণীর দাবি, ওই কোচিং সেন্টারেই তাঁদের সঙ্গে এজেন্টদের পরিচয় হয়। তারাই কলকাতায় গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য একেকজনকে ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ওই টাকায় তাদের হাজারিবাগে বেশ কিছুদিন থাকা ও পড়াশোনার খরচ হয়ে যেতে পারে। সেই কারণেই তারা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে কলকাতায় চলে আসে। মালদহের যে দুই চাকরিপ্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে তারা পরীক্ষা দিতে আসে, তাঁদের ছবির সঙ্গে রুবি ও পুনমের মুখের মিল থাকলেও আঙুলের ছাপ না মেলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
[আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফর্মের আড়়ালে রেলে চাকরির টোপ! আর্থিক প্রতারণায় গ্রেপ্তার ৩]
বালিগঞ্জ এলাকা থেকে যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজনের দাবি, তারা চাকরিপ্রার্থীদের পরিচিত। তাঁরা দুজনেই ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা দিতে রাজি হয়। বিহার থেকে বাকি যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাঁদের ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁদের সঙ্গেও কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কোচিং সেন্টারগুলির সঙ্গে কলকাতা ও এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার কোচিং সেন্টারগুলির যোগাযোগ রয়েছে। কারণ, যে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য তারা পরীক্ষা দিতে এসেছিল, তারাও কোচিং সেন্টারগুলিতে পড়াশোনা করে। সেখান থেকেই তাদের কাছ থেকে এক লাখ থেকে দু’লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। পরীক্ষা দেওয়া ছাড়াই চাকরির সুযোগ অনেকেই হাতছাড়া করতে চায় না। ধৃতদের দাবি, আরও অনেকেই এভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ডামি পরীক্ষার্থীদের ধরা যায়নি, এমন সম্ভব। যদিও সেক্ষেত্রে আঙুলে ছাপ সেই ক্ষেত্রে কীভাবে মিলল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
Source: Sangbad Pratidin