দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: মাটির বসতবাড়ির অধিকাংশই প্রায় ভস্মীভূত। ঠিক যেন জতুগৃহ। ঘরের ভিতর এদিক সেদিক পড়ে রয়েছে পোড়া জিনিসপত্র। কোথাও ছড়িয়ে রয়েছে আগুনে পুড়ে যাওয়া বইয়ের পাতা তো কোথাও পোশাকআশাক। রাজনৈতিক উত্তেজনায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া জয়নগরের দলুয়াখাঁকিতে চলছে দাঁতে দাঁত চেপে ফের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। আধপোড়া বইয়ের পাতা হাতে নিয়ে মাধ্যমিক পাশের স্বপ্নে বিভোর লড়াকু স্কুলছাত্রী আলিমাও।
জয়নগরের চালতাবেড়িয়া হাই স্কুলের ছাত্রী আলিমা লস্কর। চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সে। মা দর্জির কাজ করেন। স্বল্প আয়ে কোনওক্রমে চলে সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে পড়াশোনাই যেন বিলাসিতা! তবু মায়ের জেদ কন্যাসন্তানকে পড়াশোনা করাবেন। সেই জেদেই আর্থিক বাধাকে তুচ্ছ প্রমাণ করে মেয়েকে বই কিনে দিয়েছিলেন। মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করবে, স্বপ্ন এঁকেছিলেন দুচোখে। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল কিশোরী। নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়াশোনা করেছে আলিমা।
[আরও পড়ুন: আমহার্স্ট স্ট্রিট কাণ্ড: পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়ার নির্দেশ, অবরোধে সাফ ‘না’ হাই কোর্টের]
গত ১৩ নভেম্বর ঘটল অঘটন। ওইদিন কাকভোরে শুটআউটে তৃণমূল নেতা সইফউদ্দিন লস্কর খুন হন। তার পর দলুয়াখাঁকির একের পর এক সিপিএম নেতা-কর্মীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় মাটির বাড়ি, ধানের গোলা। আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়ে যান স্থানীয়রা। কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে যায় বহু বাড়ি। রাজনৈতিক হিংসায় পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া দলুয়াখাঁকিতে ইতিমধ্যেই ফিরেছেন মহিলারা।
লড়ছেন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আলিমা লস্করও যোদ্ধা। ছেঁড়া বইয়ের পাতা হাতে নিয়ে কান্নায় চোখ ভিজেছে ঠিকই। তবে পরমুহূর্তে চোয়াল শক্ত করে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছে সে। আলিমার মায়েরও চোখের জল বাঁধ মানছে না। মাধ্যমিকে ভালো ফল করার শপথ নিয়েছে আলিমা। স্কুলছাত্রীর আত্মবিশ্বাসই যেন কঠিন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর অক্সিজেন জোগাচ্ছে তাঁকে।
[আরও পড়ুন: বেহাল রাস্তা, অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে খাটিয়া করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু তরুণীর]
Source: Sangbad Pratidin