রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, আহমেদাবাদ: মহম্মদ শামির (Mohammed Shami) আজকাল আর কিছুতেই কিছু যায়-আসে না। না সুখে, না দুঃখে। না প্রাপ্তিতে, না শূন্যতায়। জীবনের সঙ্গে এক আশ্চর্য আপস নাকি করে নিয়েছেন তিনি। বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন ভবিতব্যের কাছে। শামি নাকি বর্তমানে ধরে নিয়েছেন যে, তাঁর অঙ্গুলিহেলনে জীবন চলবে না। বরং সময়-সময় ভাগ্যের ইচ্ছে অনুসারে তাঁকে চলতে হবে।
এই যেমন, চলতি ওয়ান ডে বিশ্বকাপে (ICC ODI World Cup 2023)। নিউজিল্যান্ডের (New Zealand) বিরুদ্ধে মাত্র ৫৭ রান দিয়ে সাত-সাতটা উইকেট নেওয়ার পর যে মহানায়কোচিত আচার-আচরণ কিংবা ভাবভঙ্গিমা প্রত্যাশিত, তার ছিটেফোঁটাও ভারতীয় পেসারের থেকে পাওয়া গেল কি? কোথায়, না তো! মুম্বই থেকে ফ্লাইটে ভারতীয় টিম (Team India) নামতে-নামতে সন্ধে সাতটা হয়ে গেল। আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কার্গো গেট থেকে টিম বাসে সর্বপ্রথম উঠলেন যিনি– তাঁর নাম মহম্মদ শামি। কিন্তু ভারতীয় পেসারের মুখচোখ দেখলে কে বলবে, মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) মহাকীর্তিকে সিংহাসনচ্যূত করে ওয়াংখেড়ে লোকগাথার সিংহভাগ কৃতিত্ব কেড়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি, শামি! দৃশ্যত সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন লাগল ভারতীয় পেসারকে। টিম বাসের জানালা দিয়ে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে উদাসী তাকিয়ে থাকলেন। তাঁকে ঘিরে আসমুদ্রহিমাচলের যে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগী স্ফূরণ চলছে, তা যেন খেয়ালই নেই!
বৃহস্পতিবারের সন্ধেয় ভারতীয় পেসারের ঘনিষ্ঠ মহলের কেউ কেউ বলছিলেন যে, জীবনে এত ঘাত-প্রতিঘাত শামি সয়েছেন, এত উত্থান-পতন দেখেছেন যে, ইদানিং সাফল্য বা ব্যর্থতা কিছুই তাঁকে আর নাড়া দেয় না। কম তো কিছু তাঁকে সহ্য করতে হয়নি গত কয়েক বছরে। চোট-আঘাত। পারিবারিক ঝঞ্ঝা। সাদা বলের ক্রিকেট সেভাবে সুযোগ না পাওয়া। শোনা গেল, বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচে দলে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে ভারতীয় পেসারকে তাঁর এক পরিচিত ফোনে কিছু বলতে গিয়েছিলেন। শামি সে সমস্ত অনুযোগকে গুরুত্বই দেননি। তিনি নাকি সটান বলে দেন, তিনি খেলছেন না, মাঠে নামছেন না, তাতে কোনও সমস্যা নেই। টিম জিতছে সেটাই আসল।
[আরও পড়ুন: ‘বিশ সাল বাদ’ প্রস্তুত মঞ্চ, ২০০৩-এর বদলা নিক রোহিতরা, চান সৌরভ]
মাঠে নেমেই সাফল্য। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন মহম্মদ শামি। ছবি: টুইটার
কিন্তু শামি নিজে বর্তমানে নিস্পৃহ হয়ে পড়লে কী হবে, তাঁর আশেপাশের লোকেরাও যে একই রকম শুকনো মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়বে, তার কোনও মানে নেই। এবং তারা পড়ছেনও না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাংলার পেসার এখন থাকেন যেখানে, সেই উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় শামির রেকর্ড দর্শনের পর (বিশ্বকাপে আজ পর্যন্ত সাত উইকেট কোনও ভারতীয় পেসার পাননি) বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে দ্রুত পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায়। ঠিক করে ফেলা হয় যে, ঘরের ছেলের বিশ্বজয় দেখতে জায়ান্ট স্ক্রিনের বন্দোবস্ত করা হবে। আমরোহা গ্রামের লোকজনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একযোগে সেখানে খেলা দেখা চলবে। এবং বিশ্বকাপ জেতার পর শামিকে গণ-সংবর্ধনাও দেওয়া হবে।
শুধু এখন মধুর পরিসমাপ্তির প্রতীক্ষা। তবে ভারতীয় পেসারের ঘনিষ্ঠমহল নিশ্চিত যে, বিশ্বকাপ আসছে। আনছেন তাঁদের প্রিয় শামিই। আমরোহাতে নিজের একটা অ্যাকাডেমি আছে ভারতীয় পেসারের। যেখানে পিচ-টিচ তিনি নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন। ফুরসৎ পেলে একাই সেখানে নেমে পড়েন। শোনা গেল, সাদা বলের ক্রিকেট যেহেতু বিশ্বকাপের আগে সে ভাবে খেলেননি শামি, তাই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নিরবিচ্ছিন্ন মহড়াও সেরে নিয়েছিলেন নিজের অ্যাকাডেমিতে। আর সেই সাধনা দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে হয়েছে, সুযোগ পেলে এ ছেলে বিশ্বকাপ না নিয়ে ফিরবে না।
বিশ্বকাপ না নিয়ে ফিরতে চান না শামি নিজেও। শোনা গেল, ব্ল্যাক ক্যাপস নিধন-যজ্ঞের পর মা’কে ফোন করেছিলেন ভারতীয় পেসার। এবং ফোনে নাকি বলেন যে, সেমিফাইনালে যে বোলিংটা করেছেন, সেই একই বোলিং বিশ্বকাপ ফাইনালেও করার চেষ্টা করবেন। এবং ফিরবেন ট্রফি নিয়ে, বিশ্বজয় করে! সমগ্র ভারতবর্ষও তো তাই চায়। চায়, প্রিয় সন্তানের হাত ধরে বারো বছর পর ফের আসুক মোহিনী মুহূর্ত, ফাইনালের আহমেদাবাদ ঢাকা পড়ুক স্বপ্নের ‘শামি’য়ানায়!
[আরও পড়ুন: চোট গুরুতর, বিশ্বকাপের পর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও নেই হার্দিক!]
Source: Sangbad Pratidin