খেতে ভাল হলেই চলবে না, জেনে নিন চকচকে আম ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সহজ উপায়

আমের ভূমিকা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিসীম। সমস্ত ফলের মধ্যে আমে ভিটামিন-এ র পরিমাণ সবথেকে বেশি থাকে। হিমসাগর আমের ফলন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার মন মতো সুস্বাদু ও চকচকে আমের জোগান দেওয়া কৃষকদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে জয়ের লক্ষ্যের একটি সুস্থ সহজ পদ্ধতি হল ব্যাগিং। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক সৌষ্ঠভ দত্ত ও তন্ময় মণ্ডল।
ভারতবর্ষে বিগত চার হাজার বছর ধরে আম চাষ হয়ে আসছে। আজও চাষিভাইরা আম চাষ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন নি। বিঘার পর বিঘা হয়ে চলেছে আম চাষ। আর এই জন্যই তো ইনি ‘ফলের রাজা’। পূজা-পার্বণে আম্রপল্লব থেকে শুরু করে রোগ-নিরাময় পর্যন্ত সবেতেই এর অভূতপূর্ব দান। খুবই কম খরচে আমের স্বাদ বাড়ানোর মাধ্যমে আর্থিক উন্নতিসাধনে কৃষকদের যৎসামান্য সাহায্য করাটা জরুরি।
আমের একটি প্রজাতি হল হিমসাগর। যেটি প্রধানত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়। এই যুগের ক্রেতারা চকচকে ও সুস্বাদু আম না পেলে না কিনেই বাড়ি ফিরে যান, কারণ সাধারণ মানুষ এখন বেশি দাম দিয়ে হলেও ভালো জিনিস খেতে বেশি পছন্দ করেন। আবার সেটা আম হলে তো কথাই নেই। রসালো ও সুস্বাদু হতেই হবে। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে হিমসাগরের ফলন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার মনমতো সুস্বাদু ও চকচকে আমের যোগান দেওয়া কৃষকদের কাছে রীতিমতো একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তার প্রধান কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে – হঠাৎ বৃষ্টির আগমন, তাপমাত্রার অত্যধিক ওঠা-নামা, প্রচণ্ড পরিমাণে ঝড় ইত্যাদি পরিবেশগত মূলক ব্যাপার, পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং রোগব্যাধি, যা হিমসাগরের বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কঠিন বাধা হয়ে দাড়ায়। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে জয়ের লক্ষের একটি সুস্থ সহজ পদ্ধতি হল ব্যাগিং। এইক্ষেত্রে ব্যাগিং বা পলিথিন বেষ্টন করে ফলকে সুরক্ষা দিতে পারলে তা যেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচায়, সেরকমই ফলের রঙ ও স্বাদকে ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।
ফলের উপর আবরণীর মত বিস্তৃত থেকে পলিথিন ফলকে বাইরের জগৎ থেকে হালকা আলাদা করে যত্নের সহিত আগলে রাখে। যদিও পলিথিন ব্যাগ ছাড়া অন্য কোনও ব্যাগিং মেটেরিয়াল দিয়েও সমান হারে ফলন পাওয়া যাচ্ছে না কি এই নিয়ে গবেষণা আরও এগিয়ে চলেছে। তবে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে কৃষকেরা আর্থিক মন্দা থেকে কিছুটা হলেও সুরাহা পাবেন, এটা অবশ্যম্ভাবী।
[আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহে পুড়ছে চা বাগান, সেকেন্ড ফ্ল্যাশে কাঁচা চা পাতার দাম তলানিতে]
হিমসাগর আম গাছে মুকুল ধরার ৪০-৫০ দিনের মধ্যে ০.৫ সেমি ব্যাসার্ধের এবং ০.৮-০.৯ মিমি পুরু সবুজ পলিথিন দিয়ে ফলটিকে আগলে রাখলে ফলের বিকাশের পর্যাপ্ত সময় থেকেই তা সুরক্ষিত থাকে (বিঃদ্রঃ সবুজ রং ছাড়া অন্য রঙের পলিথিন ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে সবুজ পলিথিনের সবদিক দিয়ে কার্যকারিতা লাইট রিফ্লেক্টন্স, এব-সর্ব্যান্স এবং ট্রান্সমিশন প্যাটার্নের পার্থক্যের জন্য বাকিদের থেকে বেশি)।
পলিথিনের নীচে পিন দিয়ে দুটো বা তিনটে ফুটো করে দিতে হবে যাতে ফলটি তার বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিমাণে গ্যাস ও জলীয় বাষ্প আদানপ্রদান করতে পারে। শুধুমাত্র এইটুকু অতিরিক্ত কাজের দরুন কৃষকেরা যখন গাছ থেকে আম পাড়তে যাবেন, তখনই এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন এবং সব থেকে বড় ব্যাপার হল আমটা কিনে এনে ঘরেও সপ্তাহ খানেক রাখা যাবে।
আসলে আমটি পলিথিনের ভিতরে সুরক্ষিত থাকছে বাইরের পরিবেশের রোদ, ঝড়, বৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে। আর ফল এরকম সুরক্ষিত থাকলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও কম থাকে। গাছের ছোট বয়স থেকেই যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন শুরু করা যায় তাহলে ম্যাচিউর অবস্থায় কিন্তু দারুন ফলন লাভের আশা করা যেতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গার অনেক চাষিভাই-ই অন্যান্য ফল যেমন পেয়ারা বা কলাতে এরকম ব্যাগিং-এর প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছেন। কারণ তাঁরা এর প্রয়োজনীয়তা আন্দাজ করতে পেরেছেন। আম পোকামাকড়ের আক্রমণ মুক্ত অর্থাৎ দেখতে খুবই আকর্ষণীয় হবে, সাইজে বড়ো, অতিরিক্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন (ভিটামিন-এ) এবং অতীব রসালো হবে – যা সহজেই কেনার জন্য আকৃষ্ট করবে ক্রেতাকে।
আম গাছে এক বছর অন্তর অন্তর ফলধারণ অন্যতম একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট অর্থাৎ এক বছর ভাল ফলন হলে পরের বছর ভাল হবে না – এই ব্যাপারটা প্রতি এক বছর অন্তর কৃষকের মাথায় দুশ্চিন্তার গুড়ি হিসেবে গেঁথে যায়। সেপ্টেম্বর মাসে গাছের গোড়া খুঁড়ে বালির সঙ্গে ‘paclobutrazol’ মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে দিলে প্রতিবছরই আম গাছে ফলন আসবে। বড় গাছের ক্ষেত্রে ৫০ মিলি এবং মাঝারি গাছের ক্ষেত্রে ৩০ মিলি প্রতি ১৫ লিটার জলে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় স্প্রে করলে (ড্রেনচিং) alternate bearing র সমস্যা দূর হবে। কৃষক চিন্তামুক্ত এবং খুশি। আমরাও খুশি।
[আরও পড়ুন: আরবের খেজুর এবার ফলবে বাংলার মাটিতেও! কৃষকের উদ্যোগে কাটোয়ায় তৈরি হল বাগান]

Source: Sangbad Pratidin

Related News
কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার বিজেপি কর্মী, অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর ক্ষিপ্ত জনতার
কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার বিজেপি কর্মী, অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর ক্ষিপ্ত জনতার

শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: ৩ দিন ধরে নিখোঁজ কিশোরীর দেহ উদ্ধার। ডুডুয়া নদীর পার থেকে বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার। ধর্ষণ করে খুন Read more

Coronavirus: একধাক্কায় অনেকটা বাড়ল দেশের দৈনিক করোনা আক্রান্ত, ফের বাড়ছে চিন্তা
Coronavirus: একধাক্কায় অনেকটা বাড়ল দেশের দৈনিক করোনা আক্রান্ত, ফের বাড়ছে চিন্তা

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা আতঙ্ক যেন শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। ঠিক যেসময় মনে হয়, এবার হয়তো এই মহামারী Read more

স্বাধীনতা দিবসে দিল্লিতে হামলার ছক? বাটলা হাউস চত্বর থেকে ধৃত IS জেহাদি
স্বাধীনতা দিবসে দিল্লিতে হামলার ছক? বাটলা হাউস চত্বর থেকে ধৃত IS জেহাদি

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাধীনতা দিবসের আগে দিল্লিতে (Delhi) হাই অ্যালার্ট। আশঙ্কা করা হচ্ছে, স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day) অনুষ্ঠান চলাকালীন Read more

মোহালিতে ইশান-সূর্যকুমার শো, পাঞ্জাবকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ মুম্বইয়ের
মোহালিতে ইশান-সূর্যকুমার শো, পাঞ্জাবকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ মুম্বইয়ের

পাঞ্জাব কিংস: ২১৪/৩ (লিভিংস্টোন ৮২*, জিতেশ ৪৯*, পীযূষ চাওলা ২/২৯) মুম্বই ইন্ডিয়ান্স: ২১৬/৪ (ইশান ৬৬, সূর্যকুমার ৭৫)   ৬ উইকেটে জয়ী Read more

‘অজিত পওয়ারকে সঙ্গে নিলেই…!’ সহযোগী বিজেপিকে হুঁশিয়ারি শিন্ডে গোষ্ঠীর
‘অজিত পওয়ারকে সঙ্গে নিলেই…!’ সহযোগী বিজেপিকে হুঁশিয়ারি শিন্ডে গোষ্ঠীর

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) রাজনীতিতে নয়া জল্পনা। যার জেরে সহযোগী পদ্মশিবিরকে হুঁশিয়ারি দিল মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের (Eknath Shinde) Read more

Kolkata Shooting: লাগাতার উপহাসের প্রতিশোধ, জাদুঘরে ঘাতক জওয়ানের টার্গেট ছিল ৪ সহকর্মী
Kolkata Shooting: লাগাতার উপহাসের প্রতিশোধ, জাদুঘরে ঘাতক জওয়ানের টার্গেট ছিল ৪ সহকর্মী

অর্ণব আইচ: দীর্ঘদিন ধরে ব্যঙ্গ। উপহাস। তাঁকে নিয়ে লাগাতার ঠাট্টা। আর সেই ব্যঙ্গের জবাব দিতেই শনিবার ভারতীয় জাদুঘরের (Indian Museum) Read more