সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাত দশকের খরা কাটিয়ে ফের ভারতের মাটিতে চিতার (Cheetah) পায়ের ছাপ পড়ল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন উপলক্ষে নামিবিয়া থেকে শনিবার ৮টি চিতা এসেছে দেশে। তাদের বাসস্থান মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) শেওপুর জেলার কুনো-পালপুর অভয়ারণ্যে। দেশের বন্যপ্রাণ জগতে চিতার পুনরাবির্ভাব নিঃসন্দেহে জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে বড় পদক্ষেপ। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে পরিবেশ মহলে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ভারতের পরিবেশে সাভানা (Savana) অরণ্যের স্থায়ী বাসিন্দা চিতাদের আয়ু কতদিন?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বুঝতে হবে কেন গোটা দেশের এতগুলি জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্যের মধ্যে চিতাদের বাসস্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হল কুনো অভয়ারণ্যকেই (Kuno Palpur Sanctuary)? ইতিহাস বলছে, এই অরণ্যেই একসময় বাঘ, সিংহ, চিতা ও চিতাবাঘের সহাবস্থান ছিল। অর্থাৎ ‘বিগ ক্যাট’ (Big Cat) গোষ্ঠীর প্রাণীরা এখানে হাত ধরাধরি করে থাকত। এখানকার পরিবেশ তাদের জন্য আদর্শ। আর এবার চিতাদের আগমন উপলক্ষে সেই অভয়ারণ্যকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আশেপাশে জনবসতি যতটুকু আছে, তা মোটেই উদ্বেগজনক নয়। সেখানে মানুষ-বন্যপ্রাণের যথাযথ সহাবস্থান হওয়া সম্ভব।
[আরও পড়ুন: পুজোর পরই নয়া জনসংযোগ কর্মসূচি তৃণমূলের! রুটিন মেনে জেলায় জেলায় যাবেন রাজ্য নেতারা]
কেন চিতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এদেশ থেকে? বিশেষজ্ঞদের মত, একসময়ে সঠিক শিকারের অভাব। অর্থাৎ চিতাদের খাদ্যাভ্যাস যা ছিল, জঙ্গলে সেসব কমে আসছিল। খাবারের অভাবে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগোয় চিতার দল। ১৯৫২ সালে চিতাকে ‘লুপ্তপ্রায়’ (Extinct) ঘোষণা করা হলেও ১৯৪৭ সালেই দেশের শেষ চিতা দেখা গিয়েছিল। আবার দেখা গেল ২০২২ সালে। তবে কি এবার কুনো পালপুরে ফিরেছে তাদের বেঁচে থাকার আদর্শ পরিবেশ। তেমনই তো বলছেন বনকর্মীরা। নামিবিয়ার ৮ চিতাদের বাঁচিয়ে রেখে বংশবিস্তারের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: বাংলার মুসলিম ভোট কাটুক বাম-কংগ্রেস, লোকসভায় আসন বাড়াতে ব্লুপ্রিন্ট বিজেপির!]
জানা গিয়েছে, কুনো পালপুরের অভয়ারণ্যে চিতাদের ভালভাবে রাখার জন্য চিতাবাঘদের (Leopard) অন্যত্র সরানো হয়েছে। কারণ তাদের শিকারি মানসিকতা চিতাদের চেয়ে বেশি। ফলে দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচারের আশঙ্কা রয়েছে। শনিবার চিতাদের খাঁচামুক্ত করে জঙ্গলে ছাড়ার মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘চিতামিত্র’ পরিবেশের কথা। বনকর্মী, আধিকারিকরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে তেমনই পরিকল্পনা করেছেন।
নামিবিয়া (Namibia) থেকে আসা ৫ স্ত্রী ও তিন পুরুষ চিতাকে একমাস থাকতে হবে ‘কোয়ারেন্টাইনে’। এই পরিবেশে তাদের মানিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ। এরপর তাদের সংরক্ষিত খাঁচায় রাখা হবে। সেখানে চিতাদের থাকার মেয়াদ অন্তত ৪ মাস। এভাবে কয়েকমাসেই তারা কুনোর পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পর মুক্ত বনাঞ্চলে ছাড়া হবে। ডায়েট মেনে মহিষের মাংস দেওয়া হবে খাবার হিসেবে। কুনোর জঙ্গলে চিঙ্কারা, কৃষ্ণসার-সহ নানা ধরনের হরিণ রয়েছে। যা চিতার শিকার হিসেবে আদর্শ। মুক্ত বনাঞ্চলে ছাড়ার পর তাদের শিকারি সত্ত্বারও পরিচয় পাওয়া যাবে।
এক থেকে দেড় বছর এভাবেই থাকবে নামিবিয়ার চিতারা। তারপর তাদের প্রজননের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চিতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা করা যাবে। তারা দেশের মাটিতে বংশবিস্তার করবে নাকি আগের মতো ফের শেষ হয়ে যাবে।
Source: Sangbad Pratidin