প্রয়োজনে গর্ভপাত আদিষ্ট। মায়ের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অসুস্থতা ও জীবনের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গর্ভপাতের অনুমতি চিকিৎসাবিজ্ঞানে দেওয়া হয়েছে। সেই বিষয়েই কথা বললেন এইমস ও কলকাতার ক্রেডেল ফার্টিলিটি সেন্টারের কর্ণধার ডা. এস.এম রহমান। মৌমিতা চক্রবর্তী
প্রসূতি মায়ের প্রাণ সংশয়ের কারণ যদি গর্ভধারণ হয়, সেই ক্ষেত্র বিবেচনা করে ১৯৭১ সালের গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন বা মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্ট (MTP)কে সংশোধন করে ২০ সপ্তাহের পরিবর্তে ২০২১ সালে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের সময়সীমাকে অনুমোদিত করা হয়েছে। আর কোন কোন পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে সেটা জানা জরুরি।
অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা/গর্ভধারণ
কপার টি, কন্ডোম, কন্ট্রাসেপটিভ পিল প্রভৃতি জন্ম নিরোধক পদ্ধতি ব্যবহারে ব্যর্থতার ফলে অযাচিত গর্ভধারণ হলে মহিলারা ডাক্তারের কাছে তাঁদের অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের অনিচ্ছা প্রকাশ করে গর্ভপাতের আবেদন করতে পারেন। গর্ভধারণ প্রতিরোধ পদ্ধতি, সংযমী যৌনচর্চা, ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ঐচ্ছিকভাবে সন্তান ধারণ থেকে বিরত থাকার অর্থ হল জন্ম নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দেওয়া। কোনও কারণবশত সেই পরিস্থিতিতে ব্যর্থ হলে গর্ভপাতকেই বিকল্প হিসাবে নির্বাচন করা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রসূতি মায়ের জীবন বিপন্ন হওয়া থেকে বাঁচাতে সঠিক পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চিকিৎসকের কাছে গর্ভপাতের অনুমতি নিতে হয়।
[আরও পড়ুন: পেটের অ্যাসিড মুখে, অল্প বয়সেই পড়ছে দাঁত! কী এই রোগ? প্রতিকার জানালেন চিকিৎসক]
শারীরিক নিগ্রহের দরুন গর্ভাবস্থা
ধর্ষণ, শারীরিকভাবে নিগ্রহ, কারও দ্বারা যৌন লাঞ্ছনা ও লালসার শিকার, ভিন্নভাবে সক্ষম মহিলা অথবা নাবালিকাদের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে গর্ভপাতের বিষয়টি স্থির করেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার কারণে গর্ভবতী হয়ে পড়ার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর গর্ভপাত করালে তাঁদের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে উপযুক্ত পরিষেবা এবং গুণমান বজায় রাখার বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা উচিত।
গর্ভস্থ ভ্রূণের অসঙ্গতি
গর্ভে থাকা ভ্রূণের মধ্যে অসঙ্গতি বা বড় কোনও রোগের লক্ষণ পাওয়া গেলে, যা জন্মের পর শিশুর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে, যেমন– ডাউন সিনড্রোম, হার্টের সমস্যা, নার্ভ বা স্পাইনের কাঠামোগত ত্রুটি, মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি বা জেনেটিক অ্যানোমলি থাকলে প্রসূতি মাকে ডাক্তারি পরামর্শমতো ও আইনগতভাবে গর্ভপাত করানো হয়। ভ্রূণের তিন মাস বয়সে এই জেনেটিক ও অ্যানোমালি পরীক্ষা করে ভ্রূণের গঠনের অবস্থান জানা যায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কোনও অস্বাভাবিকতা এবং সমস্যার সৃষ্টি হলে গর্ভধারণের সময়সীমা থেকে সর্বোচ্চ ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করানো যেতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের বিশেষ অসুস্থতা
গর্ভধারণের আগে থেকে বা গর্ভাবস্থায় প্রসূতি মায়ের এমন কিছু রোগ থাকে, যা গর্ভাবস্থাকে বয়ে নিয়ে গেলে প্রসূতির মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। যেমন-মৃগীরোগ, প্রাইমারি পালমোনারি হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা,আইসেনমেঙ্গার কমপ্লেক্স অর্থাৎ হার্ট ও ফুসফুসে অনিয়মিত রক্ত সঞ্চালন, ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট অর্থাৎ সেপ্টাল বা হার্টের প্রাচীরে ছিদ্র বা ত্রুটি (large ventricular septal defect), অ্যাকিউট পোরফাইরিয়া প্রভৃতি বিশেষ কোনও অসুখ থাকলে গর্ভস্থ ভ্রূণের থেকে প্রসূতির স্বাস্থ্য ও জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তখন গর্ভপাতের প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া যেসব গর্ভবতী মায়েরা মৃগী রোগের ওষুধ বা অ্যান্টি এপিলেপটিক ড্রাগ নেন, তঁাদের গর্ভের সন্তানের ৬-১০ শতাংশ ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে, তাঁদের জন্য গর্ভপাতকে বিবেচ্য হিসাবে ধরা হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে কোনও অনামী জায়গায় বা ক্লিনিকে অনভিজ্ঞ কারও দ্বারা গর্ভপাত করানোর বদলে MTP লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনও হাসপাতাল বা ক্লিনিকে অভিজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে এই প্রক্রিয়া করা উচিত। কারণ এদেশে বর্তমানে নির্দিষ্ট আইন, সুপরিষেবা, অভিজ্ঞ গাইনোকলজিস্ট চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি গর্ভপাতের সংখ্যাটা নিতান্তই কম নয়। ফলত প্রসূতির প্রচুর রক্তপাত, সংক্রমণ ও ইনফেকশনের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। সুতরাং সর্বদা পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা করে ডাক্তারের সাহচর্য ও পরামর্শমতো গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
[আরও পড়ুন: চিয়া বীজের ম্যাজিকে মাত্র একসপ্তাহেই ঝরবে মেদ, কোথায় পাবেন, কীভাবে খাবেন? রইল হদিশ]
Source: Sangbad Pratidin