অর্ণব আইচ: এফআইআর করতে এসে কিছু থানায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন শহরবাসীরা। কলকাতার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পুলিশ কমিশনার। এছাড়াও কোনও দেহ উদ্ধার হলে তাড়াতাড়ি সেটি শনাক্তকরণের ব্যাপারে সবরকমের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, শনিবার কলকাতা পুলিশের কর্তা ও থানার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তিনি আধিকারিকদের জানান, কলকাতার কিছু থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে অভিযোগকারীকে হয়রান হতে হচ্ছে। থানার আধিকারিকরা অভিযোগ নিতে চাইছেন না। এমনকী, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগকারীদের। কেন তাঁরা এই ধরনের আচরণ করছেন, তা নিয়ে ওসিদের প্রশ্ন করেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তা। এই ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশও করেন তিনি।
সম্প্রতি দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর থানায় (Haridevpur PS) এই ধরনের সমস্যা হয়। এমনকী, অভিযোগ করতে আসা লালবাজারে গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদেরও দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। ওই থানার ওসির পদে রদবদল করে লালবাজার। পুলিশ কমিশনের নির্দেশ, থানায় কেউ অভিযোগ করতে এলে তা গ্রহণ করতে হবে। এর আগেও কলকাতা পুলিশ নির্দেশিকা জারি করেছিল যে, কোনও থানাই ফেরাতে পারবে না অভিযোগকারীকে। এমনকী, সেই থানার ঘটনা না হলেও ‘জিরো এফআইআর’ করে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে এই ব্যাপারটির উপর ফের জোর দিচ্ছেন লালবাজার পুলিশকর্তারা।
[আরও পড়ুন: টিটাগড় গণধর্ষণ: পালানোর ছক বানচাল, গ্রেপ্তার TMC কাউন্সিলরের ভাই]
এদিন বৈঠকে থানার ওসিদের জানানো হয় যে, কলকাতায় বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে মামলা হলেও পর্যাপ্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকী, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও সময়মতো জমা পড়ছে না কেন, সেই ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়। এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। তাঁর নির্দেশ, কলকাতায় (Kolkata) যেন কোনও ভুয়ো কল সেন্টার না থাকে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ তল্লাশি চালিয়ে বহু ভুয়ো কল সেন্টার বন্ধ করেছে। গ্রেপ্তার হয়েছে অনেকেই। কারণ, ভুয়ো কল সেন্টারই হচ্ছে প্রতারণা ও জালিয়াতির আঁতুড়ঘর। তাই ক্রমাগত ভুয়ো কল সেন্টারের সন্ধান ও তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতায় সাইবার অপরাধ বেড়ে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়। এমনকী, গ্রেপ্তার হয় না অভিযুক্তরা। কলকাতায় সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেকটি ডিভিশনের সাইবার সেল ও লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকদের অত্যন্ত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। সম্প্রতি কেষ্টপুর থেকে দুই কিশোর ছাত্রকে অপহরণ করে খুন করা হয় বাসন্তী হাইওয়েতে। বসিরহাট হাসপাতালে দুই সপ্তাহের উপর দেহ পড়ে থাকলেও তা শনাক্তকরণ হয়নি। লালবাজারের কর্তাদের নির্দেশ, এই ধরনের ঘটনা যেন কলকাতায় না হয়। গঙ্গা বা কলকাতার যে কোনও জায়গা থেকে দেহ উদ্ধার হলে শনাক্তকরণের জন্য সঙ্গে সঙ্গেই যেন তার ছবি তুলে কলকাতা ও প্রত্যেকটি জেলা এবং কমিশনারেটকে পাঠানো হয়। পুজোর আগে থেকেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য থানা ও গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুজোর বাজার চলাকালীন ও পুজোর সময় যাতে ছিনতাই, পকেটমারি, ব্যাগ থেকে তুলে নেওয়া অথবা চুরির মতো ঘটনা না ঘটে, সেই ব্যাপারে প্রত্যেক ওসি ও গোয়েন্দা বিভাগকে সতর্ক করেছেন পুলিশ কমিশনার।
[আরও পড়ুন: নবান্ন অভিযানের মিছিল ভরাতে বিপুল খরচ বিজেপির, ভাড়া করা হচ্ছে ৭টি ট্রেন!]
Source: Sangbad Pratidin