বাবুল হক, মালদহ: এক সময়ে গোটা এলাকা ছিল জঙ্গলে ভরতি। রাজ পরিবারের লোকজন হাতির পিঠে চেপে, পাহাড়পুরে মহানন্দা নদীর সতীঘাটে স্নান করতে যেতেন। অষ্টাদশ শতকের একেবারে প্রথম দিকে মালদহের (Maldah) চাঁচলের রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরী একদিন সেই সতীঘাট থেকে পান অষ্টধাতুর সিংহবাহিনী মূর্তি পান। পরে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি সেই বিগ্রহ রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে সিংহবাহিনীর পুজো হয়। শারদোৎসব এখানে তাই নিত্যদিনের।
একসময় শারোদৎসবে সতীঘাটে একটি খড়ের কুঁড়েঘর তৈরি করে মাটির প্রতিমার সঙ্গে কুলদেবীরও পুজো করা হত। কাশীধাম থেকে পুরোহিত আসতেন। পরবর্তীতে রামচন্দ্রের নাতি রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরী পাহাড়পুরে স্থায়ী দুর্গামন্দির নির্মাণ করেন। তবে এখন আর রাজা নেই। রানিও নেই। রাজপাটও নেই। রাজবাড়িটাও বদলে গিয়েছে মহকুমা আদালতে। রাজপরিবারের স্মৃতি বলতে রয়েছে রাজমন্দিরটুকু। কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি মালদহের চাঁচল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja)।
[আরও পড়ুন: ‘ভুয়ো মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে মুসলিমরা’, ভয়ে গ্রাম ছাড়তে হল বিলকিসের ধর্ষকদের!]
চাঁচলের এক প্রবীণ নাগরিক কমলকৃষ্ণ মজুমদার বলছিলেন, রাজার পুজো বলে কথা। আয়োজন ক্ষুদ্র হলেও ফি বছর এলাকার নতুন প্রজন্ম কোমর বেঁধে এগিয়ে এসে এগিয়ে নিয়ে যায় রাজার এই পুজোকে। চাঁচল (Chachol) রাজবাড়িতে এই পুজোর সূচনা হলেও এখন পুজো হয় সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পাহাড়পুরের দুর্গামন্দিরে। কলকাতায় অবস্থিত রাজ ট্রাস্টি বোর্ডের অর্থসাহায্য ও এলাকাবাসীর সাহায্যে এবছরও চাঁচল রাজবাড়ির পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: নাচতে নাচতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঞ্চেই মৃত্যু শিল্পীর, হাততালি দিল দর্শক, ভাইরাল ভিডিও]
রাজ আমলের নিয়ম-রীতি মেনেই পুজো হয়ে আসছে এখনও। মূল পুজোর ১২ দিন আগেই কৃষ্ণা নবমী তিথিতে তামার ঘট ভরে পুজো শুরু হয়ে যায় পাহাড়পুরের চণ্ডীমণ্ডপে। দেবী এখানে চতুর্ভুজা সিংহবাহিনী। কৃষ্ণা নবমী তিথিতে দেবীর আরাধনা শুরু হয়। দুর্গাপুজোর সময় সিংহবাহিনী মূর্তি পাড়ি দেন পাহাড়পুরের মন্দিরে। সেখানে মৃন্ময়ী রূপে মাটির প্রতিমার পুজো হয়। প্রতিমা দশভুজা নন, চতুর্ভুজা। এই প্রতিমার সঙ্গেই পাহাড়পুরের মন্দিরে পুজোর তিনদিন অষ্টধাতুর সিংহবাহিনী মূর্তির পুজো হয়। সপ্তমীর দিন রাজবাড়ি থেকে পাহাড়পুরের মন্দিরে সিংহবাহিনী মাকে পায়ে হেঁটে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে মা সিংহবাহিনী পাহাড়পুরে যেতেন হাতির পিঠে চড়ে। এখন হাতি থাকে না।
Source: Sangbad Pratidin