রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: মা পরবেন বেনারস থেকে আনা বেনারসি। তাঁর ভোগের জন্য ছয় হাজার কিলো কালো নুনিয়া আতপ চাই। তাও রায়গঞ্জের। যোগ্য সঙ্গত করতে সোনামুগও সমপরিমাণ। সেই সোনামুগ ভাজার জন্য আনা হচ্ছে কামাখ্যাগুড়ির সুগন্ধী গাওয়া ঘি। রান্না হবে তিন হাজার কেজি হরেক সবজির লাবড়াও। মায়ের সেই ভোগ হাত পেতে নিতে রাতও জাগেন মানুষ। অষ্টমীতে ভোগের কুপনের সংখ্যাটা যে দু লাখ ছুঁই ছুঁই। আর সপ্তমী ও নবমীতে প্রায় এক লাখ করে। তিন লক্ষ বাঁশের খাঁচা তৈরি হচ্ছে সেই ভোগ তৈরিতে। অস্থায়ী পাকশালায় দশটি ইয়া বড় উনুন বানানো শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আলিপুরদুয়ার শহর এমনিতে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি সতত যত্নবান। উত্তরবঙ্গের এই জেলার নিজস্ব সংস্কার সংস্কৃতি নিয়ে গর্বও করেন বাসিন্দারা। গর্বে বুক আরও চওড়া হয় তাঁদের, শহরের হাটখোলার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাবাড়ির মায়ের স্মৃতিচারণায়। যে পুজোর ভোগের জন্য কার্যত সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন আলিপুরদুয়ারবাসী।
[আরও পড়ুন: নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা, অনুব্রতর ভারচুয়াল শুনানির দাবি আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষের]
সেই ভোগ বা খিচুড়ি মাহাত্ম্য চমৎকার। তার জন্য কালো নুনিয়া আতপ আসে সুদূর রায়গঞ্জ থেকে। এই চাল সংগ্রহের দায়িত্বে ব্রজেন সরকার। কামাখ্যাগুড়ি থেকে আসে কয়েক টিন খাঁটি গাওয়া ঘি। ভোগ দেওয়া হয় বাঁশের খাঁচায়, শালপাতায়। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বাশের খাঁচা তৈরি করেন বাণেশ্বরের কয়েকজন শিল্পী। সে এক দেখার মতো ব্যাপার বটে। খিচুড়ির সোনামুগ-সহ ভোগের অন্য উপকরণ অবশ্য স্থানীয়ভাবে কেনা হয়। অষ্টমীর ভোগের চাহিদাই বেশি। কিন্তু তার জন্য দিন তিনেক আগে থেকেই খুলে যায় পাকশালা। শুরু হয় যুদ্ধের প্রস্তুতি। রাঁধতে শুরু করেন বীরপাড়ার সোনা ঝা’র টিম। তার জন্য এর আগেরবার ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তিনি। দশটি উনুন জ্বলে। ছয় হাজার কিলো চাল লাগে। সমপরিমাণ ডালও। খানবিশেক লোহার খুন্তি নিয়ে চলে নাড়াচাড়া। সেও এক দেখার ব্যাপার বটে। মন্দির কমিটির সহ-সম্পাদক শ্যামল দে বলেন, “দুর্গাবাড়ির নাটমন্দির আমাদের কাছে গর্বের। আমাদের পরম্পরা, ঐতিহ্য ধরে রাখতে কোনও খামতি করব না।”
অষ্টমীতে এবার ভোগের জন্য ১ লক্ষ ৮০ হাজার কুপন দেওয়া হবে। পুজোর অন্যদিনের জন্য সেই কুপনের সংখ্যা ১ লক্ষের কিছু কম। কুপনের মূল্য ৫০, ১০০ এবং ১৫০। সেখান থেকেই ভোগের টাকা অনেকটাই উঠে আসে।” আলিপুরদুয়ার দুর্গাবাড়ি পুজো কমিটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ বছরও মায়ের পরনের বেনারসি শাড়ি আসছে বেনারস থেকে। পদ্মফুল নিয়ে আসা হবে কোচবিহারের গোসানিমারি থেকে। তবে মায়ের গায়ের অলঙ্কার কেনা হবে আলিপুরদুয়ার থেকেই।” শহরের সব মণ্ডপ ঘোরার পরেও ঐতিহ্যবাহী দুর্গাবাড়ির মণ্ডপে একটিবার না এলে পুজো দেখায় যেন ঠিক পরিপূর্ণতা আসে না। আর ভোগ? তা না পেলে যেন বছরটাই মাটি। উৎসবও জলে।
[আরও পড়ুন: মুরগি ‘চোর’ রক পাইথন! ক্ষতিপূরণের দাবিতে সাপ কোলে বনদপ্তরে কৃষক]
Source: Sangbad Pratidin